র্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যেভাবে একে একে মারা পড়লেন ৭ রোহিঙ্গা ডাকাত

নুরুল হক ও হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ
কক্সবাজার ভিশন ডটকম
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে গহীন পাহাড়ে র্যাবের সঙ্গে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের থেমে থেমে ‘গোলাগুলি’র ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস ৭ ডাকাত নিহত হয়েছেন।
নিহত ডাকাত দলের সদস্যরা হলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা ও শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক (৩০), মোহাম্মদ আলী (২৫), নুর হোসেন ওরফে নুর আলি (৩২) ও ইমরান (৩২)। অন্যদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
সোমবার (২ মার্চ) ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফের জাদিমোরা ও শালবনের পাহাড়ে থেমে থেমে দীর্ঘ চার ঘন্টার অভিযানে তনিহত হলেও কুখ্যাত জকির ডাকাত ওরফে জকির আহমদ পালিয়ে যান। উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েকশত রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
অভিযান পরিচালনাকারি দলের প্রধান কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উইং কমান্ডার বলেন, গত রোববার রাতে র্যাবের টেকনাফ ক্যাম্পের একটি দল হ্নীলা জাদিমোড়া-মোছনির মাঝামঝি ‘এডেরা’ নামক গভীর পাহাড়ে কুখ্যাত রোহিঙ্গা জকির ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা অবস্থানের খবর পেয়ে অভিযানে যায়। এসময় র্যাব সদস্যদের উপর গুলিবর্ষণ করে তারা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
তারই সুত্র ধরে সোমবার ভোরে তার (উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ) নেতৃত্বে র্যাবের আরও একটি বিশেষ টিম চিহ্নিত পাহাড়ের ভিন্নপথে একে একে চারটি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আস্থানায় পৌছায়। সশস্ত্র ডাকাতদলের সদস্যরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলতে থাকে। পরে সকাল ৯টার দিকে ডাকাতদল আত্মগোপনে চলে যায়।
ওই সময় র্যাব সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে ৩টি বিদেশী পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি, ৭টি ওয়ার সুটারগ্যান ও ১৩ রাউন্ড কার্তুজের গুলি উদ্ধার করেন। এসময় রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রুপের সাত সদস্যের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়।
আজিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনার সময় কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত জকির সেখানে ছিল। তবে সে পালিয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের ক্যাম্পের লোকজন ডাকাত হিসেবে শনাক্ত করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে একইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের সময় হঠাৎ করে পাহাড়ে একটি ডাকাতদল আবারও গুলি চালালে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে থেমে থেমে গুলিবিনিময় হয়।
তবে ঘটনাস্থলের আশপাশে ব্যাপক সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় পাহাড় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
তবে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বসবাসকারি টেকনাফ শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা রাজু মা (৩৫) বলেন, ‘সোমবার ভোরের দিকে গুলিবর্ষণের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সকাল ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। গুলির শব্দে মনে হচ্ছিল বাহিরে কোন ভুমিকম্প হচ্ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এই ভয়ে সকাল থেকে কিছু খাইনি। গুলির শব্দ শুনে অনেকেই কান্নাকাটি করছিল। শুনেছি পাহাড়ে ৭ ডাকাত নাকি মারা গেছে। এখন কিছুটা শান্ত হবে ক্যাম্প। কেননা তারা ক্যাম্পের মানুষদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ, খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করতো না। এই ক্যাম্পের বেশির ভাগ মানুষ খুশি হলেও ভয়ে বলছে না।’
র্যাবের টেকনাফ সিপিসি-১ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, হ্নীলা জাদিমোড়া ২৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এর সুবাদে গহীন পাহাড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ৪-৫টি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুখ্যাত জকির আহমদ ডাকাত দলের সদস্যরা।
তিনি বলেন, জকির বাহিনী গহীন পাহাড়কে আশ্রয়স্থল বানিয়ে সেখানে চালিয়ে যাচ্ছে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক কারবার। তাদের রয়েছে এক বিশাল বাহিনী। তাদের কাছে জিম্মি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লোকজন। এমনকি তারা প্রায় সময় অভিযানকালে র্যাবের উপরও গুলিবর্ষণ করে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হবে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাত রোহিঙ্গা ডাকাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি জানান, ডাকাতদের আস্তানায় পুলিশের আরও একটি বড় অভিযান চলবে।