কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এক সিএনজি চালকসহ একাধিক যুবক মিলে ৭ জুলাই রাতে পাহাড়ে তুলে তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয়ভাবে চেপে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পর পাঁচদিনের মাথায় অবশেষে মামলা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত এক যুবককে আটক করেছে মহেশখালী থানা পুলিশ। আটক মনু মিয়া মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলির আবদুর রশীদের ছেলে।
গণধর্ষণের শিকার তরুণীকেও থানায় নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার তরুণীর বাবার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায়। নানার বাড়ি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে। বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ায় মা দ্বিতীয় বিয়ে করে মাতারবাড়িতে স্থায়ী হন। মায়ের দ্বিতীয় সংসারে আশ্রিত থাকলেও কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে চাকরি করছেন ওই তরুণী।
সম্প্রতি মোবাইলে গোরকঘাটার এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ওই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রাম থেকে মহেশখালী এসেই এই পাশবিকতার শিকার হন তরুণী।
ওই তরুণীর বরাত দিয়ে চালিয়াতলী স্টেশনের মাতারবাড়ি রুটের লাইনম্যান রশিদ জানান, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে চালিয়াতলী স্টেশনে এসে নামে। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গোরকঘাটায় যাওয়া। কিন্তু পরবর্তীতে নলবিলা দরগাহপাড়া এলাকার শাহ আলমের ছেলে ওসমান গণির সিএনজিটি রিজার্ভ নিয়ে প্রথমে মাতারবাড়ি এবং পরে গোরকঘাটায় যায় তরুণী। গোরকঘাটা সিএনজি স্টেশনে প্রায় দেড়ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রেমিকের দেখা পাননি। কথা ছিল রিজার্ভ সিএনজির ভাড়া প্রেমিকই দেবে। কিন্তু প্রেমিক না আসায় অর্থ সংকটে পড়ে যান তরুণীটি।
রশিদ জানান, প্রেমিক না আসায় একই সিএনজিতে করে আবার চালিয়াতলী ফিরে যান তরুণী। সেখানে ভাড়া পরিশোধ নিয়ে চালকের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে ভাড়া মেটান তরুণী।
এদিকে বাগবিতণ্ডার সময় অনেকে জড়ো হয়। এদের মাঝে চালিয়াতলীর মৃত আবুল হাছির ছেলে আমির সালাম, মোস্তাক আহমদের ছেলে এনিয়া এবং নলবিলা দরগাহপাড়ার মোক্তার আহমদের ছেলে সিএনজি চালক আদালত খাঁও ছিল।
তরুণীর দাবি, বাগবিতণ্ডা শেষে ভাড়া মিটে গেলে সবাই চলে গেলেও সালাম, এনিয়া ও সিএনজি চালক আদালত খাঁ সহযোগিতার কথা বলে তাকে চালিয়াতলী বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরি দিয়ে নিয়ে যায়। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে সিএনজি চালক ওসমানসহ আরও বেশ কয়েকজন যোগ দেয়।
জানা যায়, পরদিন ৮ জুলাই সকালে মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সড়কের দরগাহঘোনা স্থানে মেয়েটিকে দেখতে পান স্থানীয় সুজন নামে এক মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী। মেয়েটি সেখানে কেন জানতে চাইলে সুজনকে সব খুলে বলেন তরুণী। ধর্ষকরা পাশবিকতা শেষে তার বোরকা, হাতব্যাগ, ঘড়ি কেড়ে নিয়ে নিচে নামিয়ে দিয়েছে বলে জানান। মেয়েটিকে কিছু টাকা দিয়ে মাতারবাড়ির গাড়িতে তুলেন দেন সুজন।
এরপর ঘটনাটি জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে ধর্ষকরা। লাইনম্যান রশিদের তদবিরে ঘটনা স্থানীয় মেম্বার লিয়াকত আলী ও মাতারবাড়ি মহিলা মেম্বার শামীমাকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়।
অপরদিকে মীমাংসার আশ্বাসে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেননি নির্যাতিতা। ঘটনা মীমাংসার জন্য সালিশের ব্যবস্থা করেন দুই মেম্বার। দুই দফা সালিশও বসান। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই বিকেলে মেম্বার লিয়াকত আলীর অফিসে ‘চূড়ান্ত’ সালিশের বৈঠক বসে। সেখানে সালিশের রায়ে ধর্ষকদের কয়েকজনকে লাঠিপেটা করা হয় এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে জরিমানার ওই টাকাও পাননি ধর্ষিতা।
এদিকে ঘটনা পুরোপুরি চেপে যেতে নানাভাবে ওই তরুণীকে মাতারবাড়ির মহিলা মেম্বার শামীমার বাড়িতে হেফাজতের নামে আটকেও রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। যার ফলে চাপে ও ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারছিলেন না ধর্ষিতার পরিবার।
চালিয়াতলী স্টেশনের লাইনম্যান রশিদ ঘটনা ধামাচাপার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি মহিলা মেম্বার শামীমাকে মা ডেকে বিষয়টি তাকে জানান। পরে মেম্বার শামীমা মেয়েটিকে নিয়ে চালিয়াতলীর মেম্বার লিয়াকত আলীর কাছে যান। তখন লিয়াকত আলী টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি মীমাংসার প্রস্তাব দিলে তা মেনে নেন মেম্বার শামীমা। তবে টাকার অঙ্ক নিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হয়নি।
মেম্বার লিয়াকত আলী বলেন, ধর্ষণের ঘটনাটি সত্য। ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি কিছু সিএনজি চালকসহ কয়েকজন ছেলে ঘটিয়েছে। এই ঘটনার মূলহোতা লাইনম্যান রশিদ।
নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি গত পরশু (১০ জুলাই)। ওই দিন মাতারবাড়ির মহিলা মেম্বার শামীমা ঘটনাটি আমাকে জানালে আমি তাকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
মাতারবাড়ির মহিলা মেম্বার শামীমার সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ঘটনা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে মামলা করা হয়েছে। ততক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
গোপনীয়তার স্বার্থে আসামির সংখ্যা কত তা জানাননি ওসি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। শনিবার শারীরিক পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।
Source URL: https://www.coxsbazarvision.com/archives/59792
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কক্সবাজার ভিশন
হোটেল নিরিবিলি (নিচতলা), কক্ষ নং- ১০৪, শহীদ সরণী, কক্সবাজার
মোবাইল: ০১৬১৮-৮০০১০০, ০১৯১৮-৮০০১০০ । ইমেইল: coxsbazarvision@gmail.com, ansar.cox@gmail.com